হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, তারিখে মাদিনা–এর বর্ণনায় (খণ্ড ৫৯, পৃ. ৬১) এসেছে যে, জীবনের শেষ দিকে মু‘আবিয়া অত্যন্ত দুর্বল ও কৃশকায় হয়ে পড়েছিলেন। রোগ-ব্যাধিতে তার চেহারা বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। এ অবস্থায় তিনি কাঁদতেন এবং বলতেন, কেউ কি আছে যে আমার সুস্থতার জন্য দোয়া করবে?
“কী সুস্থতা পাবো? ঘটনাগুলো তো ইতোমধ্যেই ঘটে গেছে!”
তিনি আরও বলেন, যদি ইয়াযিদের ব্যাপারে আমার নফসের বাসনা না থাকত, তবে আমি ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতাম এবং সঠিক পথ দেখাতে পারতাম। কিন্তু রাজত্বকে বংশপরম্পরায় রাখতে চাওয়ার খাহেশ আমাকে সেই সুযোগ দিল না।
আমি স্বীকার করছি—এই কাজের জন্য আমি অনুতপ্ত; কিন্তু তবুও আমি তা করেই চলেছি। নিজেকে আর ফেরাতে পারছি না।
ইয়াযিদকে উত্তরাধিকারী করার জন্য মু‘আবিয়ার প্রস্তুতি
ইয়াযিদকে শাসক স্থাপন করতে মু‘আবিয়া বিপুল ঘুষ, নিপীড়ন ও দুর্নীতি চালিয়েছিলেন। ইয়াযিদকে একদিনে সমাজে গ্রহণযোগ্য করা সম্ভব ছিল না; তাই প্রথমেই সমাজকে শূন্য করতে হয়েছিল বিচক্ষণ, ঈমানদার ও সাহসী মানুষদের থেকে। এর অংশ হিসেবে—হুজার ইবনে আদী শহীদ হন।
আমর ইবন হামক খুযায়ী—যিনি নবী (সা.)–এর সম্মানিত, ইবাদতগুণে প্রসিদ্ধ সাহাবি— তাকেও হত্যা করা হয়।
সুন্নি উৎসেই লেখা আছে—ইসলামের ইতিহাসে প্রথমবার একটি কাটা মাথা এক শহর থেকে আরেক শহরে উপহারস্বরূপ পাঠানো হয় মু‘আবিয়ার আমলে। সেটি ছিল আমর ইবন হামক খুযায়ীর মাথা, যা মু‘আবিয়ার কাছে পাঠানো হয়।
কারবালার ভূমিকা প্রস্তুতকারী পরিবেশ
এই ভয়াবহ পূর্বপ্রস্তুতিগুলিই পরবর্তীতে কারবালা ও আশুরার ঘটনায় মাথা বর্শার নোকায় প্রদর্শনের পথ তৈরি করে।
যে মানসিকতা আশুরার দিনে হুসাইন ইবনে আলীর (আ.) আহ্বান না শুনে শুধু বলেছিল, সে আলীর ছেলে—তাকে হত্যা করা ওয়াজিব।
সেই মানসিকতার মূলও খুঁজে পাওয়া যায় মু‘আবিয়ার আরেক নীতি–তে:
সমাজব্যাপী আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)–কে গালি দেওয়ার সরকারি প্রচলন।
আলী (আ.)–কে গালি দেওয়ার সরকারি প্রচলন
মু‘আবিয়ার আমলে—
হাজারো সরকারি মিম্বারে,
জুমার খুতবায়,
এমনকি নামাজের কুনূতে পর্যন্ত,
আলী (আ.)–কে গালি ও লাঞ্ছনা করা সরকারি নির্দেশে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এতে বহু অবমাননাকর বাক্য ব্যবহার করা হতো।
ইমাম হাসান (আ.)–এর শান্তি চুক্তির শর্ত
ইমাম হাসান মুজতবা (আ.) যখন মু‘আবিয়ার সাথে শান্তি চুক্তি করেন, তিনি কয়েকটি শর্ত রাখেন। মু‘আবিয়া সেগুলোর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্তকেও প্রত্যাখ্যান করে। শর্তটি ছিল, “মিম্বারে ও জুমার নামাজে আমার পিতা আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)–কে গালি দেওয়া বন্ধ করতে হবে।”
যিনি নবীর জামাতা, ইসলামের প্রথম ঈমানদার, ‘মাদীনাতুল ইলম’-এর দরজা—
তাকে গালি না দেওয়ার অনুরোধও মু‘আবিয়া অস্বীকার করে। কিছু বর্ণনায় আছে, সে স্পষ্ট বলেছিল, “আমি এটি মেনে নিচ্ছি না।”
পরবর্তীতে ইমাম হাসান (আ.) অন্তত এইটুকু বলেন, যে বৈঠকে আমি উপস্থিত থাকি, সেখানে যেন গালি দেওয়া না হয়।
মু‘আবিয়া কথায় রাজি হলেও বাস্তবে তা মানেনি।
রিপোর্ট: হাসান রেজা
আপনার কমেন্ট